এক নজরে বিপিন রাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা প্রতিরক্ষাপ্রধান বিপিন রাওয়াত নিহত হয়েছেন। বিধ্বস্ত সামরিক হেলিকপ্টারটিতে বিপিন রাওয়াতের স্ত্রী, সামরিক কর্মকর্তা ও ক্রুসহ মোট ১৪ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু নিশ্চিত করে ভারতীয় বিমান বাহিনী।

ভারতের এই শীর্ষ জেনারেলের পেশাগত জীবনের পুরোটাই সাফল্যঘেরা। ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর গুর্খা রাইফেলসের ৫/১১ ইউনিটে কমিশন পান তিনি। গুর্খা রাইফেলসে এই ইউনিটেই কর্মরত ছিলেন তার বাবা। দীর্ঘ এক দশক ধরে বিভিন্ন জঙ্গি দমন অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে বিপিন রাওয়াতের। উচ্চ পার্বত্য এলাকায় অভিযান পরিচালনায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি।

মেজর পদে থাকার সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে এক সেনা কোম্পানির নেতৃত্ব দেন বিপিন রাওয়াত। পরবর্তী সময়ে কর্নেল পদে, কিবিথুতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্ব সেক্টরে ১১ গুর্খা রাইফেলসের পঞ্চম ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

কর্মদক্ষতা আর দেশের প্রতি ভালবাসায় ক্রমেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচ্চ পদে উঠে আসেন বিপিন রাওয়াত। ব্রিগেডিয়ার হিসেবে পদোন্নতির পর তিনি সোপোরে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের পঞ্চম সেক্টরের দায়িত্ব নেন। কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ‘চ্যাপ্টার সেভেন মিশনে’ এক বহুজাতিক ব্রিগেডের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেই দায়িত্বে থাকার সময়ে তিনি দু’বার ফোর্স কমান্ডারের সম্মানে ভূষিত হন।

মেজর জেনারেল পদে আসার পর, রাওয়াত উরিতে ১৯তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসাবে তিনি পুনেতে সাউদার্ন বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। মাঝে ডিমাপুরে সেনা সদর দপ্তর তৃতীয় কর্পস কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি সেনা কমান্ডার পদে আসার পর সাউদার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই পদে অবশ্য খুব বেশিদিন ছিলেন না রাওয়ান। দ্রুতই তাঁকে আরও বেশি দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিরক্ষায়।

বিপিন রাওয়াত ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব নেন। আড়াই মাস সেই পদে থাকার পর আরও বড় দায়িত্বে আসেন তিনি। ওই বছরেরই ১৭ ডিসেম্বর চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

১৯৮৭ সালে সুমডোরং চু উপত্যকায় ভারত-চীন মুখোমুখি সংঘর্ষের সময়, রাওয়াতের ব্যাটালিয়নকে চীনের লাল ফৌজের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর বিতর্কিত ম্যাকমোহন লাইন বরাবর প্রথম সামরিক সংঘর্ষ ছিল এটি।

কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের এক বহুজাতিক সামরিক কর্মসূচি মিশন চ্যাপ্টার সেভেনের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাওয়াত। সামরিক জীবনে রাওয়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এটি। বিপিন রাওয়াত যখন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর উত্তর কিভু ব্রিগেডের দায়িত্ব নেন, তখন সেখানকার পরিস্থিতি খুব একটা ভাল যাচ্ছিল না।

দায়িত্ব নেয়ার পর বিপিন রাওয়াত সুকৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর ২০১৫ সালে মণিপুরে এক জঙ্গি হানায় আঠারো জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান। সে সময় ডিমাপুরে তৃতীয় কর্পস কমান্ডারের নেতৃত্বে ছিলেন রাওয়াত। ভারতীয় সেনার প্যারাসুট রেজিমেন্ট সেই জঙ্গি হানার যোগ্য জবাব দিয়েছিল।